Waterkeepers Bangladesh Consortium’s second data validation workshop was held on 2nd April 2022, Saturday, at 11.00 am as a part of the collection and analysis of water, air and noise pollution in Dhaka city. The workshop was held at the auditorium of Stamford University Bangladesh, Siddeswari Campus.
২ এপ্রিল, ২০২২ শনিবার সকাল ১১:০০ টায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর আয়োজনে ঢাকা শহরের পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণবিষয়ক পরিবীক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ২য় ডাটা ভ্যালিডেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালাটি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল স্বাক্ষরিত একট সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণ পরিবীক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে একটি স্টেট অব ঢাকা এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট প্রস্তুতের লক্ষ্যে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এপ্রিল, ২০২১ থেকে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ দশটি এলাকা থেকে শব্দ এবং বায়ু মানের নমুনা সংগ্রহ করে আসছে। এছাড়াও বুড়িগঙ্গা এবং ধলেশ্বরী নদীর ডায়িং, নৌযান এবং ট্যানারি দূষণের চারটি এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। সাথে সাথে নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজের মতামত গ্রহণ ও এ সংক্রান্ত নীতি, আইন ও উচ্চআদালতের নির্দেশনা পর্যালোচনা করে আসছে। এসকল বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও মতামতসমূহ গুলোকে ডাটা ভ্যালিডেশন কর্মশালায় উপস্থাপন করা হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র সমন্বয়ক জনাব শরীফ জামিল এর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিতব্য কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ন্যাকম এর নির্বাহী পরিচালক ড: মুনজুরুল হান্নান খান। কর্মশালায় সংগৃহীত গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম, পিএইচডি। এছাড়া আইনী বিশ্লেষণের বাস্তবায়ন ফাঁক ও আদালতের নির্দেশনার উপর তথ্য উপাত্ত উপস্থাাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ গোলাম সারোয়ার। কর্মশালায় আলোচনা করেন আরো কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশ প্রধান মইনুদ্দিন আহমেদ।
কর্মশালায় উপস্থাাপিত প্রতিবেদনের উপর বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর মাননীয় উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড: মোহাম্মদ ইউনুস মিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড: কে এম শরিফুল হুদা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ মনির হোসেন চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ এর সভাপতি এমএস সিদ্দিকী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক(ট্রাফিক) এবং উপসচিব আতিকুল ইসলাম পিএইচডি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রীতি কণা সিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড: মনিরুজ্জামান, ঢাকা ওয়াসার ঢাকা ল্যাবরেটরির পরিচালক ড. আলমগীর হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসেন, ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এর সাংবাদিক মোস্তফা ইউসুফ প্রমূখ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শুকনা মৌসুমে হেমায়েতপুর ও শ্যামপুরে সংশ্লিষ্ট নদীসমূহের পানির গুণাগুণ মারাত্মকভাবে খারাপ। সদরঘাটের ও হাজারীবাগের পানির গুণাগুণ বছরের অন্যান্য মৌসুমের কাছাকাছি পরিমাণ খারাপ।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সবচেয়ে খারাপ বায়ু এবং অপেক্ষাকৃত সবচেয়ে ভালো বায়ু কোন নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে না। বায়ু চলাচলের পাশাপাশি খুঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ স্থানভেদে পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণের এলাকা পরিবর্তন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ গোলাম সারোয়ার বলেন, কভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ৬০ লক্ষ মানুষ মারা গেলেও ৯০ লক্ষ মানুষ মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত কারনে। কাজেই তিনি নদী দূষণকে প্যানডেমিক বা মহামারী হিসেবে ঘোষণা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনকে সংশোধনের মধ্য দিয়ে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে এবং করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন বায়ু দূষণ আইন কে আইন হিসেবে না নিয়ে নীতিমালা হিসেবে গ্রহন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে এই উদ্যোগের উপযোগীতা কমে গিয়েছে। সমাধান হিসেবে তিনি নির্বাহীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, আইনের অস্পষ্টতা কমানো ও আইন প্রনয়নে প্রোএকটিভ এপ্রোচ নিতে বলেন এবং এনভায়রনমেন্টাল রুল অফ ল প্রতিষ্ঠা করার পরামর্শ দেন।
ঢাকা শহরের প্রায় তিন কোটি মানুষের পয়বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে না। এসব পয়বর্জ্য ঢাকার আশাপাশে নদীতে ফেলা হচ্ছে। পানি দূষণের কারনে খাদ্যে বিষক্রিয়া হচ্ছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ মো: সাজিদুর রহমান বলেন, আইনের প্রায়োগিক দিক সমূহ তুলে ধরতে হবে, পয়ঃবর্জ্য এর ব্যাপারে জোড় দিতে হবে এবং রাইট প্লানিং আনতে হবে।
নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড: আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, এই ধরনের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা আছে উল্লেখ করে । সরকারের এত বেশি মেগা প্রজেক্টের প্রজেক্টসমূহে পরিবেশ দূষণ বিষয়ে উদাসীনতায় প্রতি ঝুঁকে পরা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে।
ঢাকা ওয়াসার ঢাকা ল্যাবরেটরির পরিচালক ড. আলমগীর হোসেন বলেন, ঢাকার নদীর সমূহের পানি পরিশোধনের অযোগ্য উল্লেখ করে বলেন সরকার ঢাকার মানুষের পানির জোগান দিতে পদ্মা নদী থেকে পানি আনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
কমিউনিটি লিডার সাইফুল বলেন, বালু নদী দূষণে এখন মৃত। এই দূষণ যুক্ত পানি দিয়ে চাষ হচ্ছে। আবার সেই নদীর মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এসব ফসল এবং মাছে কি পরিমান ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা পরীক্ষা করা উচিৎ। এর ফলে মানবদেহের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার তথ্য উপাথ্য তুলে ধরা উচিত।
কমিউনিটি লিডার জান্নাতী আক্তার রুমা সবাইকে বাস্তবতা দেখতে নদীর পাড়ে যাওয়ার আহবান করেন।
পিকেএসএফ এর ড. আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন নদী দূষণ কমাতে হলে নদী দখল বন্ধ করতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে ইটের ভাটার জন্য একটি এলাকা নির্ধারণ করে দিতে হবে।
শাহাজালাল ইউনিভার্সিটি এর সহযোগী অধ্যাপক তারেকুল ইসলাম, এই রকম গবেষণা গুলো কয়েক বছর ধরে করে যেতে হবে, এক্ষত্রে ডাটা সেটের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ দূষণ গুলোর স্বাস্থ্যগত ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কতটুকু তা গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনতে হবে। সবাইকে ভবিষ্যত প্রজম্নের জন্য বসবাস যোগ্য একটি দেশ গড়তে সহায়তা করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেল্থ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখওয়াত গবেষনার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন এবং আরো ব্যাপ্তি নিয়ে গবেষণা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে গবেষণা ভিত্তিক, পরিবেশ দূষণ গুলোর ফলে আর্থিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত যে সব ক্ষতি তা নিয়ে আরো গবেষণা করতে হবে। এছাড়া পরিবেশ সম্পর্কিত আইন গুলোর নিয়েও কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ সম্পর্কিত সংগঠন গুলোকে একত্রিত করে কাজ করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ এর সভাপতি এমএস সিদ্দিকী বলেন, আইন প্রণয়নে জনগনের অংশগ্রহণ দরকার। তিনি বারবার ট্যানারি সড়ানো সহ বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে ট্যানারির ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার কথা বলেন।
প্রধান অতিথি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, সকল দূষণের মাত্রা সাধারণ মানুষ কে বুঝাতে হবে। যখন সাধারন মানুষ দূষণ সম্পর্কে জানবে এবং তাদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে বুঝবে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে।
কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি মাইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগন কে সম্পক্ত করে পরিবেশ দূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে। পানি ও বায়ু সংরক্ষণ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের সমকক্ষ উল্লেখ করে তিনি পরিবেশ রক্ষায় সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে তাগিদ দেন। করার মাধ্যমে গনতান্ত্রিক সুশাষণ নিশ্চিত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।
বিশেষ অতিথি ড: মুনজুরুল হান্নান খান সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তুলে ধরেন। বিভিন্ন সূচক নিয়ে মানুষের ভুল ধারনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন শব্দ দূষন মানুষকে ট্রমায় ফেলে দেয়। তিনি পরিবেশ মন্ত্রনালয় ও অন্যান্য প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
সভাপতি ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র সমন্বয়ক জনাব শরীফ জামিল বলেন, যে কোন পলিসি বাস্তবায়নে আইন অনেক গুরুত্বপূর্ন। শুধু আইন থাকলে হবে না, প্রতিষ্ঠান ও নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। পলিসি তৈরী ও বাস্তবায়নে আমাদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। তিনি এই রিপোর্ট এ নতুন যেসব তথ্য যোগ হয়েছে তা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন সরকার কে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই প্রয়াস সত্যিকার সফলতা লাভ করতে হলে সরকারী ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরামর্শ ও সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম, রাজধানী ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে ইউএসএআইডি এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুম-লীয়
দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে এই কনসোর্টিয়ামটি গঠিত হয়েছে। এই দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি কর্মসূচিটি ঢাকা শহরের বায়ু এবং শব্দ দূষণসহ বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌযান কর্তৃক দুষণ, ডাইং কারখানা কর্তৃক দূষণ এবং ট্যানারি দূষণ নিয়ে কাজ করে আসছে।
এই কার্যক্রমের অংশ হিসাবে পরবর্তীতে আরো একটি ডাটা ভ্যালিডেশন ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে স্টেট অব ঢাকা এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট চুড়ান্ত করা হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।