কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ বাস্তবায়নে গাইডলাইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন পরিবশেবিদরা। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট ক্লাবে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-২০২১’ বিষয়ক এক গণশুনানিতে এ দাবি জানানো হয়।
সেমিনারে আলোচকরা জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট ২২ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ মাথাপিছু বর্জ্য সৃষ্টির হার হবে ২২০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট বর্জ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৭ হাজার ৬৪ টনে; যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে পড়বে। নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় থ্রি আর (রিডিইউজ, রিইউজ ও রিসাইক্লিলিন) এর পরিবর্তে কঠিন বর্জ্য ব্যববস্থাপনা মৌল নীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নগরে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং সর্বোপরি প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার গুণগত পরিবর্তন হয়ে একটি সবুজ ও স্বাস্থ্যকর নগর গড়ে উঠবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।
অতিথি হিসেবে উপিস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজাউল করিম বাবলু, অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপিস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মাইনউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান, ডিএসকে এর কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর সানজিদা জাহান আশরাফী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন পরিবেশ বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বাংলাদেশের ১১টি আইন, বিধিমালা ও পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা অতি সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ প্রণয়ন করেছি। ২০২৫ সালে দৈনিক বর্জ্য উৎপন্ন হবে প্রায় ৪৭ হাজার টন। বিশাল এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ জনবলের পাশাপাশি অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সর্বপরি অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।
সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ডাম্পিং হচ্ছে কিনা তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনিটরিং করছেন। তিনি এই বিধির বাস্তবায়নে নিজ নিজ এলাকায় কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেন।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, একটি নীতিমালার মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের একটি নীতিমালা করা, যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করা, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। বর্জ কর্মীদের জন্য একটি আধুনিক ক্লিনার পল্লি গড়ে তোলা হবে। তাছাড়া খুব শিগগিরই সরকার বর্জ্য থেকে বিদুৎ উৎপাদনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশ যেমন রোল মডেল, তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের কাছে রোল মডেল হওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের আছে। আমাদের মোট উৎপাদিত বর্জ্যের সিংহভাগই গৃহস্থালির বর্জ্য। এটা থেকে চাইলেই আমরা সার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।